এবারের সংখ্যা আঁধার থেকে আলোয় উত্তরণের জয়গান, কালোকে নাশ করে নারীশক্তির উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত হওয়ার গাথা। প্রবহমান উপন্যাস ছাড়াও রয়েছে ৪টে প্রবহমান গল্প, ১৬টা কবিতা, ৬টা গল্প আর বরাবরের মতোই অনান্য বিশেষ বিভাগগুলি। প্রথমে বলি অন্ধকারের আখ্যান - অন্ধকারের নানান রূপ, কোথাও সে রহস্য, কোথাও ভূতপ্রেত, কোথাও দুর্ঘটনা, কোথাও অন্ধত্ব আবার কোথাও নৃশংসতা। আমরা আঁধারের এই সবকটা রূপকেই ধরার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন লেখায়। যেমন, "কাটাঘুড়ি আট"-এ এবার রয়েছে ছোট্ট সুমির ঘৃণ্য সামাজিক বর্বরতা প্রত্যক্ষ করা আর তার ফলপ্রসূত আত্মবিদ্বেষের মুখোমুখি হওয়ার কাহিনী। ‘প্রবাহে ভেসে’-য় থাকল "কুলধারা: রাজস্থানের প্রেতপুরী"-তে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই সংখ্যাতেই আমরা প্রথমবার রহস্য আর অশরীরী গল্প আনলাম - যথাক্রমে, "আক্রোশ" আর "বাঁশি"। আর বাঙালির ভূতপ্রেত তো শুধু ভয়-পাওয়ানো, আতঙ্ক উদ্রেককারী নয়, আমাদের ভূত তিনবরও দেয়। সেইরকমই এক মনছোঁয়া ভূত-রোমন্থন সিনেম্যাটিক বিভাগের "ধর্মপত্নী শাঁকচুন্নি"-তে, যা শুধু ভৌতিক নয়, নারীর চালচিত্রও বটে। অন্ধকারের আরেক রূপ হলো অত্যাচার, বর্বরতা - হোক না তা ইতিহাস, উদাহরণ রইল ‘ম্যাপ পয়েন্টিং’-এর "খয়েরি বিষের নদী"-তে। ইতিহাস আর যুদ্ধ তো সমার্থক - তাই সেই বইটার "ইতিহাস কথা কও"-তে রয়েছে যুদ্ধ, রাজপাট আর নারীচরিত্রের বিশ্লেষণ। অন্ধকার মানে মৃত্যু, অঘটন আর যন্ত্রণাও - সেসব কাহিনী থাকল প্রবহমান গল্প "মিছিল" আর "অলকেশ"-এ কিংবা কাব্যপ্রবাহ "আত্মহনন", "নৈরাজ্য" আর "নষ্ট সভ্যতা"য়, এমনকি হারিয়ে যাওয়া পেশা-র "ইঁদুর ধরা"-তেও। আঁধার তো অনেক হলো, এবার নাহয় আলোয় ফিরি। খুশির প্রবাহ-তে "আলোয় ফেরা" বর্তমানের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ওপর লেখা একটি অসাধারণ স্যাটায়ার। কাব্যপ্রবাহ-র "সতী পাগলী" বা কাহিনীপ্রবাহ-র "আনন্দিতা" নারীশক্তির উন্মোচনের কাহিনী - পন্থা আইনসম্মত বা আইনবহির্ভূত যেমনই হোক, নারী তো নিজের মতো করেই তার জীবনের অন্ধকার দূর করে। না না, আমরা কোনো গর্হিত কাজকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না, যদি বিশ্বাস না হয় প্রবহমান গল্প "র্যাগিং"-এর অলঙ্করণটা দেখেই নিন না। এই সংখ্যায় "র্যাগিং"-এর শেষপর্ব - রইল সেই চিরন্তন কালো থেকে আলোয় আসার গল্প। মিষ্টি প্রেমের প্রবহমান গল্প "আমার মন কেমন করে" গত সংখ্যায় যেমন দুর্গাপুজোর ছুটির প্রেক্ষাপটে এগোচ্ছিল, এবারে তা কালীপুজোর প্রেক্ষাপটে উপসংহারের দিকে পা বাড়িয়েছে। এছাড়া কাহিনীপ্রবাহ-র "চিন্ময়ী" আর "দৃষ্টি" মানসিক সংকীর্ণতা আর সংস্কারের বেড়াজালের অন্ধকার ছিন্ন করে বেরিয়ে আসার গল্প। এই সংখ্যার আরেক বৈশিষ্ট্য - এখানে স্থান পেয়েছে প্রবাহ প্রতিযোগিতার সেরা গল্প, প্রবন্ধ আর কবিতা ও 'সেরার সেরা' লেখা - ভয়কে জয় করে এগিয়ে চলার কাহিনী "হয়রানি", বিদ্রোহী কবির মানবিকতার আখ্যান "সন্ন্যাসী সুর সৈনিক" আর আর প্যালেস্টাইন-ইজরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শান্তি আর সম্প্রীতির উদাহরণ "গুলির শব্দের নিচে মা ঘুমিয়ে আছে"। শুধু কি পুরস্কৃত লেখারাই উত্তরণের পথ আওড়েছে? না, 'জীবনপ্রবাহ'-র "ষড়বিন্দুর জাদুকর লুই ব্রেইল" - অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়া এক অসামান্য মানুষের জীবনচরিত। বিশ্বের আপামর দৃষ্টিহীন মানুষকে হতাশা আর অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আশা আর প্রজ্ঞানের আলোয় উত্থিত করার কারিগর যে মানুষটি, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন না জানালে তো আমাদের উত্তরণের আখ্যান অসমাপ্ত রয়ে যেত। তবেএই সংখ্যা হৈমন্তিক বিকেলের মনখারাপ করা মেদুরতাও, আকাশপ্রদীপের রাতজাগা একাকিত্বও। "বৃষ্টি থামার পর", "আকাশ প্রদীপে আলোকিত", "হেমন্ত" ইত্যাদি কাব্যপ্রবাহ তারই প্রমাণ। আচ্ছা, 'আটপৌরে' বললেই ঘরোয়াভাবে শাড়িজড়ানো, শাঁখা-সিঁদুর পরা মানুষগুলোর কথাই মনে পড়ে, তাই না? বিশেষ করে নারীশক্তি সংখ্যা যখন? কিন্তু প্রবাহ তো উল্টোপথের পথিক! তাই এবারে আটপৌরে-তে কলম ধরেছেন পুরুষ লেখক - হলফ করে বলতে পারি , গোমড়ামুখো মানুষটির মুখেও হাসি ফুটবেই ভোজবাজি পড়ে। বাজি পোড়ানো কালীপুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ,তাই ‘ জানেন কি’ তে “বাজিতেই বাজিমাত”, এক নারীর জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার গল্প। জগদ্ধাত্রীপুজো বাঙালীর ট্রেডমার্ক- তা নিয়ে এবারের দ্বিতীয় ‘জানেনকি’ “হেমন্তের দুর্গাপুজো”। নভেম্বর মানেই আমেরিকায় থ্যাঙ্কস্গিভিং, পুমর্মিলনের দিন তাই ‘হেসেখেলে হেঁশেলে থাকল এই উৎসবের এক চটজলদি রেসিপি। সবশেষে, "কথা হোক"-এর প্রসঙ্গ। এবারের সংখ্যা জুড়ে এমনিতেই শুধু অন্ধকার আর আলোর গল্প, তাই আলাদা করে আর জটিল মনস্তত্ব-র প্রবন্ধ নেই। থাকল শুধু গত সংখ্যার উত্তর আর নতুন কিছু প্রশ্ন।
A new age publishing house that promises to inspire and support creativity in budding writers.